পূজা পরিক্রমা

মন্তব্য: উপন্যাসটির প্রথম প্রকাশ কোলাজ পূজাবার্ষিকী ১৪২১ (সম্পাদিত সংস্করণ)।

পাঠকদের সুবিধার জন্য অধ্যায়গুলির লিঙ্ক নিচে দেওয়া হল।

অধ্যায়                           ১০   ১১   ১২   কোলাজ সংস্করণ

1মহাসপ্তমীর রাত। সপ্তমীর পূজা চলছে পুরোদমে। ঢাকিরা মহানন্দে ঢাক পিটিয়ে চলেছে। কাঁসরের শব্দের সঙ্গে ঢাকের আওয়াজ দুর্গাপূজার মাদকতা এনে দিচ্ছে বাতাসে। বাঙালীর অতি প্রিয় এই ধ্বনি। কিন্তু এই সুমধুর শব্দ যেন কর্কশ লাগছে অনির্বাণের। রাস্তায় মানুষের ঢল বের হলেও সে বাড়ীতে অন্ধকার করে একা বসে আছে। তার মাথা বন বন করছে রাগে। সময়ের সাথে সাথে বেড়ে চলেছে রাগের তীব্রতা। হাত দিয়ে দু কানটা যথাসম্ভব চেপে ধরল সে। কী নিষ্ঠুর এই শব্দটা তার কাছে। আগের বছর সে কলকাতার বাইরে ছিল, তাই অসুবিধা হয় নি। কিন্তু এবার বাধ্যতামূলক থাকতে হয়েছে অফিসের কাজে।

পড়তে থাকুন

সাহায্যপ্রার্থী

প্রলয়ের মনটা আজ ভাল নেই। বাবা-মা, বাড়ী বিশেষ করে গার্লফ্রেন্ড রেখার কথা ভীষণ মনে পড়ছে। সবেমাত্র ৭ দিন হল ব্যাঙ্গালোরে এসেছে সে। কিন্তু, মনটা পড়ে আছে আসানসোলে। এই বছর বি টেক পাশ করে চাকরি খুঁজতে গিয়ে ব্যাঙ্গালোরে একটা কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে যায় সে। মোটা অঙ্কের অফার তাকে এই দুই হাজার কিলোমিটার দূরে নিয়ে আসতে প্রলুব্ধ করে।

ব্যাঙ্গালোর শহরটা যদিও তার বেশ ভালই লেগেছে। আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক, রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিছন্ন। কোম্পানি তাকে ডায়মন্ড ডিসট্রিক্ট নামক এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ভিতর একটা ফ্ল্যাটে রেখেছে। এপার্টমেন্ট যে এত সুন্দর হয় তা আগে তার জানা ছিল না। জলে টইটম্বুর নীল সুইমিং পুল, বাচ্চাদের খেলার সুন্দর পার্ক, বিশাল জগিং ট্র্যাক, টেনিস ও ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট তাকে বিমোহিত করেছে। টেনিস কোর্টগুলি কোম্পানির ফ্লাটের ব্যালকনি থেকে দেখা যায়। সকালে বেশ কয়েকজন টেনিস খেলে। স্নান করার আগে প্রান ভরে তাদের খেলা দেখে সে। যদিও এখানে থাকার মেয়াদ আর বেশিদিনের নয়। পরবর্তী ৮ দিনের মধ্যে তাকে নতুন আস্তানা খুঁজে নিতে হবে। কলেজের সিনিয়রদের মাধ্যমে সে একটা থাকার ব্যবস্থা মোটামুটি পাকা করে এনেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সে ডিসিশন নিতে পারবে।
অফিসে এখন কাজের চাপ কম। ফ্রেশার বলে কাজের ট্রেনিং শুরু হয়েছে। আজ সকালে তিন ঘণ্টার একটা ট্রেনিং হবার কথা ছিল। সেইমতো রেখার সাথে ভিডিও চ্যাট করার কথা ছিল বিকেল ৪টে থেকে। কিন্তু, ট্রেনারের ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য দুপুর ২টো থেকে ক্লাস শুরু হয়। ফলে বানচাল হয়ে যায় চ্যাটের প্ল্যান। রেখা কলেজে থাকায় তাকে সে জানাতেও পারে নি এই পরিবর্তনের কথা। চ্যাটে প্রলয়কে না পেয়ে রেখা ভীষণ দুঃখ পায়। একের পর এক দুঃখ-অভিমান ভরা রেখার এসএমএস প্রলয়ের মনটা খারাপ করে দেয়। ক্লাস শেষে মোবাইলে রেখার কান্না শোনার পর থেকে সে ভীষণ আপসেট হয়ে আছে।

পড়তে থাকুন

গানের ওপারে

মিসেস সেন দরজায় ধাক্কা মারতে মারতে বললেন- “মাম্পি,-অ্যাই মাম্পি – দরজা খোল, খেতে আয়। বাবা কতক্ষণ অপেক্ষা করবে তোর জন্য?”

আরও কয়েকবার দুমদুম করে দরজায় আওয়াজ করলেন মিসেস সেন। ভিতর থেকে বিদিশা মানে মাম্পির গলা পাওয়া গেল। সে গান গাইছে –“ও মেরে সোনারে সোনারে সোনা, দে দুঙ্গি জান জুদা মৎ হো নারে”

মিসেস সেন বিরক্ত হয়ে বলতে থাকলেন –“এই গান-পাগল মেয়েকে নিয়ে আমি আর পারছি না। গান শুনলে যে ও কোন ভাব জগতে চলে যায় কে জানে। আগে তাও টেপ রেকর্ডারে গান শুনত, ডাকলে সাড়া দিত। এখন হয়েছে আইপড, সারাদিন কানে গুঁজে গান শুনছে। আজ আবার দরজাও ভিতর থেকে বন্ধ করে রেখেছে। কখন হুশ হবে কে জানে।“

পড়তে থাকুন

১০০

মন্তব্য: গল্পটির প্রথম প্রকাশ কোলাজ ১৪২০ পূজা-বার্ষিকীতে। কোলাজ কর্তৃপক্ষের শর্তাবলী অনুসারে গল্পটি ম্যাগাজিনের পাতা থেকে স্ক্যান করে দেওয়া হল।

পড়তে থাকুন

ইচ্ছাপূরণ

–    এক –

সুমিত ও কার্তিক স্কুল থেকে বাড়ী ফিরছে। আজ ওদের স্কুল হয় নি। একজন বয়স্ক মাস্টারমশাই কাল রাতে মারা গেছেন। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রেয়ারের পর ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাড়াতাড়ি ছুটি হলেও ওরা একটু খেলাধুলা করে নিয়েছে বাকী বন্ধুদের সাথে। মধ্যাহ্নের সূর্য প্রখর হবার সঙ্গে ওরা খেলা গুটিয়ে এখন বাড়ীর অভিমুখে রওনা হয়েছে।

ওরা দুজনেই কসবার কাছে এক বস্তিতে থাকে। সুমিত থাকে তার মায়ের সাথে। ওর বাবা মারা গেছেন তিন বছর আগে। ওর মা বিভিন্ন বাড়ীতে বাসন-মাজা, ঘর ঝাঁট-মোছার কাজ করে সংসার চালান। কার্তিকের অবস্থা সামান্য ভাল। ওর বাবা নিউজপেপার, ম্যাগাজিন বিক্রি করে সংসার চালান। এই দুই দশ বছরের খুদে সদস্যরও সংসারে কিছু অবদান আছে। ভোরবেলা উঠে ওরা বস্তির আরও কয়েকজন বাচ্চার সাথে কাগজ কুড়ুনির কাজ করে। প্লাস্টিক, পলিথিন ব্যাগ, আস্ত শিশি-বোতল ইত্যাদি সংগ্রহ করে বাড়ী নিয়ে আসে। সেগুলো ওদের বাবা-মা বিক্রি করে দেন। এই সামান্য কটা টাকায় কিছুই হয় না। তবু ওদের কাছে এটা অনেকটাই খেলার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। পড়াশুনার তেমন ক্ষতি হয় না বলে ওদের বাবা মা এতে আপত্তি করে না।

পড়তে থাকুন

পরিবর্তন

সন্ধ্যে ৭ টা। প্রতিদিনের মতো অচিন্ত্য ও ইলোরা বাড়ির ব্যলকনিতে বসে চা খাচ্ছে। সারাদিনের কাজের পর এটাই ওদের গল্প করার সময়। অচিন্ত্য একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজ করে। ইলোরা একটি স্কুলে পড়ায়। দুজনের কাজের সময়ের তারতম্যের জন্য সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এই সময়টাতেই প্রথম একসাথে ওরা অনেকক্ষণ কাটাতে পারে। সারাদিনের কাজের পরে এই আড্ডাটা ওদের কাছে একটা নেশার মতো হয়ে গেছে। আজ একটু বৃষ্টি হচ্ছে। আদা মেশানো চা এই বাদলার দিনে বেশ ভাল লাগছে দুজনের। ঘরের ভিতর বিছানায় রাখা মোবাইলটা বেজে উঠতে ইলোরা ফোনটা রিসিভ করতে উঠে গেল। অচিন্ত্য চায়ে চুমুক দিতে দিতে ব্যলকনি থেকে দৃশ্যমান রাস্তার দিকে চোখ নিবন্ধ করল।

প্রায় দশ মিনিট পর ইলোরা ফিরে এলো। এক চুমুকে কাপে পড়ে থাকা বাকী চা শেষ করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আপনমনে হাসতে থাকল। অচিন্ত্য কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল – “কে ফোন করেছিল? ফোন রাখার পর থেকে হেসেই যাচ্ছ দেখছি।“

পড়তে থাকুন

উপহার

৮ই মে – আমার জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন । দিনটি আমার সবচেয়ে প্রিয়বন্ধু দীনেশের জন্মদিন । কিন্তু দুই বছর আগের ঘটনার জন্য দিনটা আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে । ওই ঘটনার সাথে আমি আকস্মিকভাবে জড়িত থাকলেও ঘটনার প্রেক্ষাপট দীনেশ ও তার মায়ের কাছ থেকে পরে জেনেছিলাম । সেই ঘটনাগুলিকে যথাসম্ভব গুছিয়ে বলার চেষ্টা করছি ।

পড়তে থাকুন

রাখী

রিটায়ারমেন্টের পর জমা টাকা দিয়ে টালিগঞ্জের ভিতরে একটা বাড়ি কিনে ফেললেন সৃজনবাবু । বাড়িটা বড় রাস্তা থেকে অনেকটা ভিতরে – বেশ নিরিবিলি । দোতলা বাড়ি – বসার ঘর, খাবার ঘর, রান্নাঘর ছাড়া চারটি শোবার ঘর এবং দুটি টয়লেট । তিনজনের পরিবারের পক্ষে এই বাড়ি যথেষ্ট । পরিবারের বাকি দুইজন সদস্যা হলেন সৃজনবাবুর স্ত্রী প্রমিলাদেবী ও তাদের মেয়ে রাখী । রাখী কলেজে পড়ে – B.Sc. র দ্বিতীয় বর্ষে । যদিও এই পরিবারে আরো একজন সদস্য আছে – ওনাদের ছেলে রক্তিম । সে থাকে বিদেশে । রক্তিম বিবাহিত । বিয়েতে সৃজনবাবু ও প্রমিলাদেবী দুজনের ভীষণ আপত্তি ছিল বলে সে বাবা-মার সাথে সম্পর্ক রাখে না । সৃজনবাবু এই মানসিক ধাক্কা সামলে উঠতে পারলেও প্রমিলাদেবী তা পারেননি । এখনও তিনি ছেলের জন্য লুকিয়ে কান্নাকাটি করেন । রাখী তার দাদাকে খুব ভালোবাসতো । সে চেষ্টা করেছিল দাদার সাথে সম্পর্ক রাখতে । ই-মেল, চিঠি ইত্যাদির মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা সে করেছিল । কিন্তু, দাদার উত্তর সে কোনভাবেই পায় নি ।

পড়তে থাকুন

Valentine’s day

‘হাইওয়ে ধরে হেঁটে চলেছি প্রায় এক ঘন্টা ধরে । এখন রাত প্রায় সাড়ে তিনটে । বেশ ঠান্ডা রাস্তায় । তবে হাঁটছি বলে ঠান্ডাটা মনে হচ্ছে না । মাঝে মাঝে আলোর ঝলকানি দিয়ে তীব্র গতিতে গাড়িগুলো পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে । কিছুক্ষণ চেষ্টা করেছিলাম কোনো গাড়ি যদি লিফট দেয় । বৃথা চেষ্টা, এত রাত বলেই হয়তো কেউ দাঁড়াচ্ছে না । অগত্যা হেঁটে চলেছি । সকালের মধ্যে Bangalore পৌঁছতে হবে । আজ ১৪ ই ফেব্রুয়ারী – Valentine’s day । আমার থুড়ি আমাদের বিয়ের পর এই প্রথম Valentine’s day । চিত্রাকে surprise দিতে হবে । ও যে কী খুশি হবে সেটা ভেবেই কোনো ক্লান্তি হচ্ছে না শরীরে । আপনারা হয়তো ভাবছেন বৌকে wish করব বলে এতো রাতে হাইওয়েতে কেন ? – তাহলে তো প্রথম থেকে ঘটনাটা বলতে হয় ।’

পড়তে থাকুন

Traffic Signal

গাড়ীতে উঠে সীটে বসে সুনন্দা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল | আজ সে ভীষণ খুশি | তার অনেকদিনের সাধ আজ পূরণ হয়েছে | তার স্বামী রথীনের সাথে সে বেট লড়েছিল যে রথীন এই বছর তার কোম্পানিতে ডিরেক্টর হবে | রথীন এই পদোন্নতি একেবারেই প্রত্যাশা করে নি | তার থেকেও সিনিয়র কয়েকজন কোম্পানিতে আছেন | কিন্তু তা সত্বেও ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাকেই এই পদে মনোনীত করেছে | বেতন বেড়েছে বেশ মোটা রকমের | সেই সঙ্গে কোম্পানির অংশীদারও হয়েছে সে | এই পদোন্নতিতে সুনন্দার অনেকটাই ভুমিকা আছে বলে সে মণে করে | MD ও তার স্ত্রীকে মাঝে মাঝেই বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে ভালোমন্দ রান্না করে খাওয়ানো, তাদের ছেলেকে প্রতিবার দামী উপহার দেওয়াটা এর অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে | তাই সে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আজ সুনন্দাকে তার পছন্দমতো একটা দামী হীরের নেকলেস কিনে দিয়েছে |
পড়তে থাকুন